
শ্রীবরদী প্রতিনিধি:
চলতি বর্ষা মৌসুমে সীমান্ত জনপদে পাহাড়ী ঢলে খরস্রোতা পাহাড়ি নদী দিয়ে ভেসে আসা কাঠের লাকড়ি সংগ্রহ করে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার পথে বন বিভাগের সদস্যরা আটক করে নিয়ে যায় দিনমজুর বখতিয়ার মিয়া ওরফে বাচ্চা গেল্লার জীবিকা নির্বাহের একমাত্র অবলম্বন অটো ভ্যানটি।
পৈত্রিক সম্পত্তি না থাকায় অভাব অনটনে বেড়ে ওঠা সিংগাবরুনা ইউনিয়নের সিংগাবরুনা গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে দিনমজুর বখতিয়ার ওরফে বাচ্চা গেল্লা বেঁচে থাকার অবলম্বন খুঁজতে ধারদেনা করে ক্রয় করে একটি অটো ভ্যান।
আর এ অটো ভ্যান চালিয়ে আয় কৃত টাকায় কোনো মতে চলছিল তার সংসার। অভাব ছিল তার নিত্য সঙ্গী। শত কষ্টকে বুক চাপা দিয়ে আশায় বেঁধেছিল একদিন খুঁজে পাবে সুখের সন্ধান দিন মজুর বাচ্চা গেল্লা।
তবে তার স্বপ্ন ভেঙে গেলো স্থানীয় বালিজুরী বন বিভাগের স্টাফরা ধরে নিয়ে যাই বাচ্চা গেল্লার অটো ভ্যানটি। ফলে কর্মহীন হয়ে পড়ে হতদরিদ্র পরিবারের একমাত্র উপার্জনশীল ব্যক্তি বখতিয়ার ওরফে
বাচ্চা গেল্লা।
আটক অটো ভ্যানটি ফিরে পেতে বন বিভাগের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও স্থানীয় সমাজ পতিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোন প্রতিকার পাইনি। উল্টে শুনতে হয়েছে তাদের মুখে মন্দ কথা। কিভাবে চলবে তার সংসার, স্ত্রী ও একমাত্র সন্তানকে নিয়ে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবেন। কিভাবে শোধ করবেন পাওনাদারের হাওলাতের টাকা। শুধু চোখে মুখে দেখতে পেল হতাশা ছুটে গেলেন স্থানীয় কর্ণঝোড়া বাজারের তরুণ ও উদীয়মান সমাজকর্মী মাহবুবুর রহমান বিপ্লবের কাছে। পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকতে সহযোগিতা চাইলেন তার নিকট। সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিলেন সিংগাবরুনা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী মাহবুবুর রহমান বিপ্লব। আর নিজ অর্থে বাচ্চা গেল্লাকে নতুন একটি অটো ভ্যান গাড়ী কিনে দিতে চাইলেন তিনি। অবশেষে ২৮ শে আগস্ট বৃহস্পতিবার দুপুরে নিজের টাকায় কেনা অটো ভ্যানটি হতদরিদ্র বাচ্চা গেল্লার হাতে তুলে দিলেন বিপ্লব।
অটো ভ্যানটি হাতে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন দিনমজুর বাচ্চা গেল্লা কেঁদে কেঁদে বললেন বিপ্লব উদার মনের পরিচয় দিলেন, যা বর্তমান সময়ে কেউ কারো জন্য করে না। দেড় মাস কর্মহীন হয়ে পড়ে সবার দ্বারে দ্বার ঘুরে বেড়িয়েছি কেউ সহযোগিতা করেনি উল্টো মন্দ কথা বলে তাড়িয়ে দিয়েছে। ভাবছিলাম গাড়ি না পেলে ঢাকায় চলে যাবো কিন্তু আমাকে নিজের টাকায় গাড়ি কিনে দিলেন বিপ্লব। আমার কি অপরাধ ছিল কেন আমার গাড়ি আটক করলো বন বিভাগ। অথচ প্রতিরাতেই এ পাহাড় থেকে বনের গাছ কেটে গাড়ি ভরে নিয়ে গেলও বন বিভাগ দেখছেন। আমার অপরাধ একটাই আমি গরিব। সিংগাবরুনা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মোখলেছুর রহমান মেম্বার বলেন, আমার বাড়ির পাশেই হত দরিদ্র বাচ্চা গোল্লার বসবাস। তার ভ্যানটি বন বিভাগের সদস্যরা ধরে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে আমি রেঞ্জ অফিসে দুদিন গেলেও আইনের নানা জটিলতা দেখিয়ে তারা ভ্যানটি ছেড়ে দেয়নি। ফলে প্রায় দেড় মাস যাবত কর্মহীন হয়ে পড়ে সে। বিপ্লব এ পরিবারটির পাশে দাঁড়িয়েছে। তাকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই। সিংগাবরুনা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য বিপুল মিয়া বলেন, পাহাড়ি নদীতে ভেসে আসা লাকড়ি সংগ্রহ করার অভিযোগে বাচ্চা গেল্লার অটো ভ্যানটি ধরে নিয়ে যায় বন বিভাগ।
জন প্রতিনিধি হিসেবে আমি কয়েকদিন গেলেও বন কর্মকর্তারা ভ্যানটি না ছেড়ে দিয়ে আমাদের সাথে খারাপ আচরণ করে।
এ প্রসঙ্গে মাহবুবুর রহমান বিপ্লব বলেন, বখতিয়ার বাচ্চা গেল্লা আমাদের ইউনিয়নের একজন বাসিন্দা। হতদরিদ্র এ মানুষটি অটো ভ্যান চালিয়ে তার পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করে আসছিল। কিন্তু দেড় মাস পূর্বে তার একমাত্র আয়ের উৎস ভ্যানটি কেড়ে নিয়ে যায় বন বিভাগ। ফলে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে তিনি তাই আমার ব্যক্তিগত অর্থে আমি তাকে একটি অটো ভ্যান কিনে দিয়েছি। বাচ্চা গেল্লার মত দরিদ্র মানুষের পাশে আমি আছি এবং থাকবো। এবং আমার সাধ্যমত সহযোগিতা করে যাব।